শুধু বাংলাদেশ নয়, এর পূর্বে উপমহাদেশ থেকে সফর করা দল গুলোর কেউই
নিউজিল্যান্ডে ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। আমরা যদি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ
হই, তাহলে
অতীতে সফরকারী উপমহাদেশের দল গুলো ও তেমনটি করেছে।
বাংলাদেশ একদিনের সিরিজ ৩-০ তে হেরেছে। কিন্তু এতে বাংলাদেশের বিশাল
কোন ক্ষতি হয়ে যায়নি। এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নিজের হুশ হারিয়ে, রেগে গিয়ে
সমালোচনা করলে পজিটিভ দিক এবং ভুল গুলো চোখে পড়বে না।
ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং-এ বাংলাদেশের সমন্বয়ের অভাব
ছিলো। প্রথম একদিনের ম্যাচে ভালো ব্যাটিং হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয়টাতে বোলিং ভালো
হয়েছে। এটার পেছনে ক্রিকেটীয় কারন আছে এবং সেটি হলো, পীচের আচরন।
এই পীচ গুলোতে – সেটা যতই ফ্ল্যাট হোক না কেন – বাউন্স এবং
মুভমেন্ট একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। উপমহাদেশের পীচ গুলোর চেয়ে এখানে বাউন্স এবং
মুভমেন্ট একটু বেশী থাকে। উপমহাদেশে যে বল ৫ সেন্টিমিটার লাফিয়ে উঠে, অস্ট্রেলিয়া
কিংবা নিউজিল্যান্ডে সেটা ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লাফায়। আবার উপমহাদেশের যে বল
গুলো ৩-৪ সেন্টিমিটার বাক খায়, ডাউনআন্ডারে সেটার বাকের পরিমান হয় ৬ থেকে ৭
সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
এসব ব্যাপার গুলো কাউন্টার করতে হলে টেকনিক্যাল অ্যাবিলিটির সাথে,
সাথে;
এটার
সাথে অভ্যস্ত হওয়াটা খুব মেজর একটি ফ্যাক্টর।
উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের ট্রিগার মুভমেন্ট ব্যাকফুটে নয়, ফ্রন্ট ফুটে এবং
তারা বাউন্সের ওপর সহজে যেতে পারে না। উপমহাদেশের উইকেটে ব্যাটিং করতে, করতে ফ্রন্ট
ফুটে আসার অভ্যাসটা অটোম্যাটিক্যালি আমাদের মধ্যে এসে পড়ে যেটা একদিনে দূর করা
সম্ভব নয়। ব্যাকফুট স্ট্রোক-প্লে কি এবং সেটার গুরুত্ব কতটা আমারা সেটার অনুধাবন
করি বাইরে ট্যুর করার পর।
পেস বোলারেরা বাউন্স দেখে এত উৎসাহিত হয় যে তারা মনে করতে থাকে,
বল
শর্ট-অফ-লেন্থে ফেললেই কেল্লাফতে এবং সেজন্য শর্ট পীচ বোলিং করতে গিয়ে বল গুলো লং
হপে বেশী পড়ে। কারন উপমহাদেশের বোলাররা এরকম কন্ডিশনে বোলিং করে অভ্যস্ত নয়।
এক্সাইটমেন্টের কারনে তারা সঠিক লেন্থটি বুঝতে পারে না।
এসব কন্ডিশনে আইডিয়াল লেন্থ হলো – ১। নতুন বলে ফুল
এবং থ্রি-কোয়ার্টার-লেন্থ টপ-অফ অফ-স্ট্যাম্প। পীচ-ইট-আপ কিন্তু নয়। পীচ-ইট-আপ
উপমহাদেশের ভালো কাজ দেয়। এবং ২। বল পুরনো হলে, মিডল এবং অফ
স্ট্যাম্প টার্গেট করে ফুল এবং স্ত্রেট – উইকেট-টু-উইকেট।
এটা রান কমাতে এবং চাপ বাড়াতে সাহায্য করে। রান কমতে থাকলে চাপ বাড়বে এবং চাপ
বাড়লে উইকেট পড়বে।
উপরের ব্যাপার গুলো সব কোচই তাদের দলকে বুঝিয়ে দেন কিন্তু অভ্যাস বলে
একটা কথা আছে। এসব ব্যাপারে প্রেকটিক্যাল এক্সপ্রেরিয়েন্স না থাকলে, একদিনে ধাতস্থ
হওয়া সম্ভব নয়। এবং এই ব্যাপার গুলোকে আয়ত্ত করতে হলে বিবিএল কিংবা সিপিএল নয়,
কাউন্টি
ক্রিকেট খেলাটা খুবই দরকারি।
বাইরের ট্যুর গুলোতে ফিল্ডিং-এর লেভেল ২০০% হতে হয় কারন বল গুলো খুব
দ্রুতে হাসে সেটার জন্য যে ধরনের ফোকাস এবং রিফেলক্স থাকতে হয়, সেটা এখনও
বাংলাদেশের গড়ে ওঠেনি। আর সেজন্য আমাদের ফিলিং মানসম্মত হয়নি।
এখন কোচ কিংবা ক্রিকেটারদের সমালোচনা করার পূর্বে এসব ব্যাপার গুলো
ভেবে নেওয়া উচিৎ। আবেগ দিয়ে ক্রিকেট হয় না। ধৈর্য ধরতে হবে।
সর্বোপরি, টিম সিলেকশনে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইসদের কতটুকু
আধিপত্য সেটা একবার ভেবে দেখা উচিৎ। এভারেজ প্লেয়ার গুলো মনে হয় না কোচের সিলেকশন
বরঞ্চ বিপিএল মালিকদের প্রেশারে নেওয়া হয়েছে। এমনটা আমি মনে করি।
আমি সাংবাদিক নই। ক্রিকেট খেলোয়াড় ও নই। সামান্য একজন ক্রিকেট ভক্ত।
হয়ত অনেক কিছু নাও বুঝতে পারি তবে কোনটা খারাপ এবং কোনটা ভালো, সেটা বোঝার
ক্ষমতা কিছুটা হলেও আছে।
বাংলাদেশের এই পরাজয়ে আমি একটুও হতাশ নই এবং উগ্রভাবে সমালোচনা করতে
ও রাজি নই। আমি দলের পাশে আছি এবং থাকবো। এই পরাজয় একটি শিক্ষা যেখান থেকে
বাংলাদেশ দল তাদের ভুল গুলো শুধরে নিবে।
ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার
No comments:
Post a Comment