Saturday, June 17, 2017

একজন গ্রেট ক্রীড়া সংগঠক নিয়ে আমার কিছু কথা

একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কে, জেড, ইসলামের হাতে কলমে কোন শিক্ষা ছিলো না। শুধু পরিস্থির মোকাবেলা করে তিনি যে শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক দূর নিয়ে যেতে যথেষ্ট অবদান রেখছে।

আমার বাবা পূর্ব পাকিস্তন আমলের জনপ্রিয় ফুটবল দল ইপিআইডিসিতে ফরিদপুর থেকে একজন সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সেই ১৯৬৮ সালের দিকে (সালটা সঠিক মনে করতে পারছি না)। কিন্তু তিনি খেলতে যেতে পরেন নাই কারন তখন কেউ তার গ্লাসে পানির সাথে সাল ফিউরিক এসিড মিশিয়ে দিয়েছিলো যেটা পান করে উনি হাসপাতলে ছিলেন এবং একটি মৌসুম খেলা থেকে বিরত ছিলেন।

বাবার দোষ ছিলো উনি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রলীগের স্পোর্টস সেক্রেটারি ছিলেন। আর তাই হয়ত কেউ শত্রুতা করে এরকম ঘৃণ্য কাজটি করেছিলো। তখনকার ছাত্রলীগ এবং এখনকার চারিদিক কাঁপানো ছাত্রলীগের মধ্যে অনেক তফাৎ। সেই ছাত্রলীগ নিজের গায়ের কাপড় খুলে গরীবদের দিয়ে আসতো। এই কাজটি আমার সেজো মামা, যাকে নিয়ে দুদক এবং কিছু সুশীল প্রানি যথেষ্ট হ্যারাস করেছেন, অনেক করতেন।
আর এখন......    

যাক গে সেসব কথা। আসল কথায় আসি।

বাবার মুখে কে, জেড, ইসলামের কথা শুনেছি। ঐ ইপিআইডিসির অনেক কাজ এই ইসলাম সাহেবকে করতে হতো। ক্লাবের বাজেট, বিদেশী ফুটবলারদের পেমেন্ট  থেকে শুরু করে টেন্ট খরচার কাজও করতে হতো। উনার লেখা বই থেকে জানতে পেরেছি, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বিটিএমসি ছিলো সবচেয়ে বৃহত্তম ক্রীড়া দল। এই দলেরও সব দায়িত্ব ইসলাম সাহেবের ঘাড়ে ছিলো। এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে উনার দায়িত্ব পড়ে।

দায়িত্ব নেবার পরই উনি ভাবতে থাকেন এই দেশের ক্রিকেটকে কিভাবে জনপ্রিয় করে তোলা যায় এবং যদি ফুটবল উন্মনাদনার মধ্যে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতেই হয় এবং এটাকে একটি প্রেফেসনাল রুপদান করতে হয় তাহলে প্রথম টার্গেট হওয়া উচিৎ স্কুল ক্রিকেট।

সত্তর দশকের শেষ দিকে এবং আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক স্কুলে ক্রিকেটের চর্চা হতো। ক্রিকেট সরঞ্জামদি এত ব্যয়বহুল ছিলো যে অভিজাত শ্রেণীর বাইরে কেউই ক্রিকেট খলেতে চাইত না। কিন্তু অভিজাত শ্রেণীর কাছে ক্রিকেট শুধুই ছিলো একটা হবি, পেশা হিসেবে কেউই নিতে চাইত না। ইসলাম সাহেব ভাবলেন এই ক্রিকেটকে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের দাড়ে, দাড়ে পৌঁছে দিতে স্কুল ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটানো ছাড়া সম্ভব না।  

১৯৮২ সালের আগস্ট মাস। ইসলাম সাহেব তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং তৎকালীন বিসিসিবিড় সাধারন সম্পাদক এবং লেঃ কঃ রেজাউল জলিল ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন বোর্ডের (এনএসসিবি) চেয়ারম্যান । ইসলাম সাহেব অনূর্ধ্ব ১৮ ক্রিকেট প্রশিক্ষন ক্যাম্পের জন্য রেজাউল জলিলের কাছে অনুমতি এবং আর্থিক সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি দেন।

ক্রিকেট কোচ এবং আম্পায়ার সৈয়দ আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে ২১ দিনের ঐ প্রশিক্ষন ক্যাম্পটি পরিচালনা করেছেন মরহুম বজলুর রশিদ এবং মরহুম চান খান। ঐ ক্যাম্পের জন্য আশ্চর্যজনক ভাবে প্রায় ৫০০ জন আবেদন করেছিলো। প্রতিদিন সকাল-বিকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষকদের দৈনিক হাত-খরচ বহন করার সামর্থ্য ছিলো না বিসিসিবির। এই কারনে জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন বোর্ডের কাছে টাকা চাইতে হয়েছিলো এবং তারা ইসলাম সাহেবকে নিরাস করেননি। ক্যাম্পের উদ্বোধন কালে ইসলাম সাহেবের হাতে এনএসসিবি-এর চেয়ারম্যান ২৫,০০০ টাকার চেক তুলে দেন।

ক্যাম্পটি অনূর্ধ্ব ১৮ হলেও ট্রেনিং-এ অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে বেশীরভাগ ছেলেদের বয়স ১৬-এর নিচে। ইসলাম সাহেবেরই প্রতিষ্ঠান নিরমান ইন্টারন্যাশনালকে স্পন্সর হিএসবে এগিয়ে আসতে হয় এবং একটি সফল ক্যাম্প শেষে ইসলাম সাহেব ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নির্মাণ ক্রিকেটের সূচনা করেন।

মোট ২২ টি স্কুল অংশ গ্রহন করেছিলো এবং তাদেরকে ৬ টি গ্রুপে ভাগ করে প্রথমে লীগ ভিত্তিতে এবং পরবর্তীতে নকআউট পদ্ধতিতে টুর্নামেন্টএর আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্কুল দলকে ১০০০ টাকা করে অংশগ্রহণ ফি ছাড়াও প্রতিটি ম্যাচে ব্যাট বল সহ ক্রিকেটের বাকি সরঞ্জামাদির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিলো এবং সাথে ছিলো লাঞ্চের ব্যবস্থা। সেই সাথে, প্রতিটি ম্যাচে একজন ম্যাচ ম্যানেজার নিযুক্ত করে তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়েছিলো ম্যাচ তদারকির দায়িত্ব।

যেসব মাঠ গুলোকে খেলার মাঠ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিলো, ইসলাম সাহেব তাঁর দলবল নিয়ে সেসব মাঠকে ক্রিকেট খেলার উপযোগী করে তোলেন এবং তাদের এই প্রচেষ্টা স্কুলের ছেলেদের মধ্যে ক্রিকেটের উৎসাহের বীজ বুনটে অনেক সাহায্য করেছিলো। স্কুল ক্রিকেটের এই উৎসবের প্রথম ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।

ইসলাম সাহেব এক কথায় বাংলাদেশের জেলা গুলো  চোষে বেরিয়েছেন স্কুল ক্রিকেটের এই বিপ্লবকে ছড়িয়ে দিতে এবং এক দশক পর, স্কুল সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছিলো ৪০০-এর ওপর। টেস্ট মর্যাদা পাবার পূর্বে এই নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট ফুটবলের উন্মাদনার মধ্যে ক্রিকেট নামে যে একটি খেলা আছে সেটি বাংলাদেশীদের স্মরন করিয়ে দিত।

এই ইসলাম সাহেবকে বর্তমান প্রজন্মের কতজন চেনে। আমি প্রথম আলোর ওপর অনেক ক্ষ্যাপা কিন্তু তারা একটি ভালো কাজ করেছে গত বছর এবং সেটি হলো কে, জেড, ইসলামকে সম্মননা প্রদান করা। কেউ একজন তো এই লোকটিকে স্মরন করেছে।

আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাসটা অনেক কষ্টের এবং গৌরবের।
এই বদ্বীপে ক্রিকেটের উত্থান একদিনে হয়নি।

আমি অনেক গল্পের মধ্যে একজন গ্রেট ক্রীড়া সংগঠকের সম্পর্কে কিছু কথা বললাম।

আশা করি যারা পড়েছেন তাদের ভালো লেগেছে।                  

ধন্যবাদ 
ফয়সাল সিজার 

No comments:

Post a Comment