বাংলাদেশের
মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলে সেই ১৯৫৯ সালে। তখন অবশ্য এই দেশ
পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিলো। রিচি বেনোর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী
অস্ট্রেলিয়া দল পাকিস্তান সফরে আসে। কলিন ম্যাকডোনান্ড, ওয়ালি গ্রাউট, নেইল হারভে,
অ্যালেন ডেভিডসন, ইয়ান ম্যাককিফ, নরম্যান ও’ নিল, লিন্ডসে ক্লাইন, ম্যাককে প্রমুখদের
সমন্বয়ে গঠিত দলটি সত্যিই সমিহ করার মতো ছিলো। সেই সফরে দলের সাথে এবিসি রেডিও
ধারাভাষ্যকার মাইকেল চারলটন, চিকিৎসক ইয়ান ম্যাকডোনান্ড এবং সাংবাদিক ওয়ালি পাগ ও
সফরসঙ্গি হিসেবে ছিলেন।
সেই সময়ে
উপমহাদেশ সফরকালে টিমের চিকিৎসকদেরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গণ্য করা
হতো। কারন উপমহাদেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোটা ছিলো খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং
সর্বদা ট্রপিক্যাল ডিসিসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকত। সেই হিসেবে, ডাঃ
ম্যাকডোনান্ডের উপদেশ গুলোকে অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্ব সহকারে
নিতো। বলে রাখা ভালো, ডাঃ ম্যাকডোনান্ড ছিলেন টিমের ওপেনিং ব্যাটসম্যান কলিন
ম্যাকডোনান্ডের বড় ভাই যিনি নিজেও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার ছিলেন।
ডাঃ ম্যাকডোনান্ড দলের সদস্যদের ট্যাপের
পানি এবং সালাদ খেতে নিষেধ করেছিলেন। ব্ল্যাক কফি এবং মাছের ফ্রাই ছিলো খাবারের
অন্যতম মেন্যু।
বিমানবন্দর থেকে হোটেলে পৌছানোর সময়
যাত্রাপথে অস্ট্রেলিয়া টিমকে বেশ বিস্মিত করেছিলো। নরম্যান ও’ নিল বলেছিলেনঃ
বিমানবন্দর থেকে হোটলের যাত্রা আমি জীবনেও ভুলব না। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ।
আমি আমার জীবনেও এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দেখিনি। বেশীরভাগ লোক কুড়ে ঘরে থাকছে এবং
তাদের কোন যথাযথ পানি, বিদ্যুৎ, পয়নিস্কাসন এবং অন্যান্য সুবিধা নেই।
বেনো বাসের চালককে ঢাকা স্টেডিয়ামের পথ
দিয়ে টিমকে হোটলে নিয়ে যেতে বলেন। স্টেডিয়াম দেখে বেনো মুগ্ধ হোন – একটি সুন্দর
সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি কাদার স্তুপ, পিচ।
কিন্তু হোটেলে তার এবং অস্ট্রেলিয়া টিমের
অভ্যর্থনার জন্য ছিলো পোকামাকড় এবং টিকটিকি। নিঃসন্দেহে এটা সেই আমলে খুবই
বিব্রতকর ব্যাপার। ভাবতে ভালো লাগে, এখন এই দেশের অবস্থা কতটা পরিবর্তন
হয়েছে।
নভেম্বরের ১৩ তারিখে প্রথম টেস্ট শুরু হয়।
বেনো তসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিং-এ পাঠায়। বেনো এবং ডেভিডসনের মারাত্মক বোলিং-এর
সামনে পাকিস্তান মাত্র ২০০ রানে গুটিয়ে যায়। হানিফ মোহাম্মদ ৬৬ রান করেছিলেন এবং
অ্যাংলো পাকিস্তানী ডানকান শার্প করেছিলেন ৫৬ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া করেছিলো ২২৫
রান।
ফজল মাহমুদ এবং নাসিমুল গনির বিধ্বংসী
বোলিং-এর সামনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের খারাপ অবস্থা। কিন্তু নেইল হারভে
হার মানার পাত্র নন। ম্যাটিং উইকেটে উনি একজন সাহসী যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ
হয়েছিলেন। অসাধারন ফুটওয়ার্ক এবং টাইমিং-এর সাহায্যে উনি ৯৬ রানের একটি ক্লাসিক
ইনিংস খেলেছিলেন। এবং তার যে ধৈর্য নিয়ে উনি উইকেটের একটি সাইড ধরে রেখেছিলেন মনে
হচ্ছিলো যেন কোন এটম বোমাও হারভেকে উইকেট থেকে সরাতে পারবে না।
পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৪ রানে
অলাউট হয়ে যায়। বেনো এবং ম্যাককে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা সামলাতে পারেনি।
বাংলাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্ট ম্যাচটি যেতে আট উইকেটে।
ঢাকা স্টেডিয়ামের দর্শকের উপস্থিতি ও
অস্ট্রেলিয়ানদের অনেক মুগ্ধ করেছিলো। যদিও প্রথম দিনের খেলাতে দর্শকরা খুবই নিরব
ছিলেন কারন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা এক, এক করে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ানরা নয়েজি
ক্রাউড খুব পছন্দ করেন আর তাই এই নীরবতা তাদের তেমন একটা পছন্দ হয়নি।
কিন্তু দ্বিতীয় দিনে, ফজলের বোলিং ঢাকার
দর্শকদের ট্র্যাডিশাল রূপটি ফিরিয়ে এনেছিলো। হারভে বলেন, রান নেবার সময় তার কল ওপর
পাশের ব্যাটসম্যান ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছিলো না।
ম্যাচ শেষে হোটেলে অস্ট্রেলিয়ান টিমকে
মাংস এবং পাই খেতে দেওয়া হয়। এটা যেন তাদের কাছে ম্যাচ জয়ের পুরস্কারের চেয়েও বেশী
কিছু। তাদের মনে হলো এই জীবনে প্রথম কোন খাবারের দেখা পেয়েছে। মনে হলো পুরো টিম
বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার
No comments:
Post a Comment