বাংলাদেশের ফেসবুক পাড়া মমিনুলের জোড়া সেঞ্চুরি নিয়ে খুব খুশী। এদের
মধ্যে বেশীরভাগই সারা বছর ক্রিকেট খেলা দেখেই না একমাত্র বাংলাদেশের খেলা ছাড়া।
এদের মধ্যে আছে ফেসবুকের রাজনীতিবিদ, নীতিবাক্য চাপড়ানো মোটিভেসনাল স্পিকার,
সেলেব্রিটি
চিকিৎসক, মিডিয়াকর্মী ইত্যাদি।
এই যেমন “ডাক্তার প্রতিদিন” নামক একটি
ওয়েবসাইট যেটা বিএসএমএমইউ-এর একজন সহযোগী অধ্যাপক চালান যাকে জীবনেও ক্রিকেট নিয়ে
কথা তো দূর ক্রিকেট শব্দ উচ্চারন করেছেন কিনা সন্দেহ আছে সেই তিনি তার চিকিৎসা
বিষয়ক ওয়েবসাইটে মমিনুল নিয়ে না বুঝে পোস্ট দিয়ে সাইটের গুরুত্ব কতখানি কমিয়ে
দিচ্ছেন সেটা উনি নিজেও বুঝতে পারছেন কিনা জানি না। এখন প্রথম আলোকে খুশী করতে
যেয়ে উনি এরকম কাজ করলে সেটা একভাবে চিকিৎসক সমাজকেই জোক বানিয়ে দেয়। কারন এই দেশে
অনেক চিকিৎসক আছেন যাদের ক্রিকেট নলেজ বেশ ভালো।
এই মমিনুলকে ক্রিকেটসকার ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম হাইলাইট করেছিল।
বাংলাদেশ মিডিয়ার মুখে তখন ‘ম’ শব্দের উচ্চারন শোনা যায়নি বলেই মনে
আছে। ঐ বছর মমিনুল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বলে উঠলে প্রথম আলো ক্রিকেটসকারের
হেডলাইন ব্যবহার করে তাকে নিয়ে রিপোর্ট করে।
ক্রিকেটসকারে মমিনুলকে নিয়ে লেখা সেই লেখক হচ্ছে আমি। অতঃপর মমিনুলের
সাফল্যে এসব মৌসুমি ক্রিকেট ভক্তদের চেয়ে আমি বেশী খুশী হব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু
এরকম মরা উইকেটে সেঞ্চুরি করাকে আমি খুব বড় করে দেখি না এবং এখনও মমিনুলের টেকনিকে
সমস্যা আছে যেটা এখন না শুধরালে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে।
***
আসল কথায় আসি।
মমিনুলের সাফল্যে সবচেয়ে বেশী খুশী হাথুরুসিংহে হেটারসরা। তাদের মতে
মমিনুল বলে হাথুরুসিংহেকে উচিৎ জবাব দিয়েছে। কিন্তু হাথুরিসিংহে এবং মমিনুল কি
শত্রু নাকি? গতবছর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মমিনুলকে বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথম
আলো এবং বিডিনিউজের কিছু দালাল টাইপের সাংবাদিক এটাকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে দাঁড়
করিয়ে দিল কিন্তু মমিনুলকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছিল সেটা এরা উল্লেখই করেনি। কারন এরা
বসেই থাকত কিভাবে হাথুরুসিংহেকে হেয়প্রতিপন্ন করা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে মমিনুল কেন বাদ পড়েছিল সেটা নিয়ে গতবছর আমি পোস্ট
দিয়েছিলাম। সেই পোস্ট থেকেই আবারও কিছু কথা বলছি।
সব ক্রিকেটারের যেমন একটি লীন-প্যাচ/খারাপ সময় আসে, মমিনুল ও তেমন
একটি লীন-প্যাচের শিকার হয়েছিলেন। মমিনুল একজন টেস্ট ব্যাটসম্যান কারন ৫০ ওভারের
ম্যাচে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি তেমন কিছুই প্রমান করতে পারেননি। কিন্তু টেস্ট
ক্রিকেটেও তিনি তার ফর্ম হারাতে শুরু করেন ২০১৫ সাল থেকে।
২০১৪ সালে তার ব্যাটিং এভারেজ ছিলো ৫১.১৭ কিন্তু ২০১৫ সালে এসেই তার
এভারেজ নিচের দিকে পড়তে থাকে। ২০১৫ সালে তিনি পাঁচটি টেস্ট খেলেছিলেন যেখানে তার
এভারেজ ছিলো ৩৬.৮৬। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছিলো যেখানে তার
এভারেজ ছিলো ২৩.৫০ এবং ২০১৭ সালে তিনটি টেস্ট খেলে তার ব্যাটিং এভারেজ হয়েছে
২৩.০০।
উপরের পরিসংখ্যান বলছে মমিনুলের ফর্ম ভালো ছিল না। এখন যে
ব্যাটসম্যানের ফর্ম নেই তাঁকে যদি দলে না নেওয়া হয় তাহলে সেটা কি যৌক্তিক না
অযৌক্তিক? কারও ফর্ম ভালো না হলে তাঁকে ড্রপ করা হয় যেন সে তার টেকনিকের উপর
আরও বেশী কাজ করার সুযোগ পায়। এটা কোন ষড়যন্ত্র না।
অ্যালেন বোর্ডার কিংবা ভিভিএস লক্ষনের ন্যায় ব্যাটসম্যান ও খারাপ
ফর্মের জন্য দল থেকে বাদ পড়েছিলেন এবং তারা ঘরোয়া ক্রিকেট এবং অ্যাকাডেমিতে
নিজেদের ভুল গুলো স্টাডি করে আবার ফিরে এসেছেন।
***
ক্রিকেট কিংবা ফুটবল যেই স্পোর্টসের কথাই বলুন না কেন, এগুলো এত সহজ
না। এখানে স্টাডি ম্যাটার করে। এবং এসব ব্যাপারে মতামত দেবার পূর্বে খেলাটা
সম্পর্কে ভালোভাবে স্টাডি করা উচিৎ এবং আপডেটেড থাকা উচিৎ।
আমি সেই পোস্টে বলেছিলাম, “মমিনুলকে সময়
দিতে হবে। সে ফিরে আসবে কিন্তু তাকে সময় দিতে হবে। এখন চট্টগ্রাম টেস্টে সে
পারফর্ম করতে পারলে তার আত্মবিশ্বাস কোথায় যাবে”?
সেদিনের সেই বাদ দেওয়াটা কি যৌক্তিক না অযৌক্তিক ছিল সেটার বিচার
আপনারাই করুন। ঐ বাদ না দিলে মমিনুল নিজেকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেত না। কাওকে দল
থেকে বাদ দেয়াটা কোন ষড়যন্ত্র না বরং
ক্রিকেটীয় কারন।
প্রথম আলো এবং বিডি নিউজের কিছু দালালদের খপ্পরে না পড়লে আপনি নিজেই
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার
No comments:
Post a Comment