Tuesday, April 10, 2018

চাঁটার দল

উত্তাল ঢাকা। ঢাকা শহরের সকল ছাত্রছাত্রী একজোট হয়ে তাদের আধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে।বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান বিজয় ও তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।বাবা-মা অনেক টাকা খরচ করে তাকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার নামকরা এক মেডিকেল কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিজয় মেধাবী না কিন্তু রেগুলার ছাত্র। যে করেই হোক তাকে পাঁচ বছরের মধ্যেই পড়াটা শেষ করতে হবে। দুটো প্রফ সে একবারেই শেষ করেছে। এখন বাকি ফাইনাল প্রফ। এই প্রফ পাশ করলেই তার মুক্তি। তার বাবাকে আর মাসে, মাসে এত বেতন দিতে হবে না।

কিন্তু ঢাকা সহ পুরো দেশ উত্তাল। সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে অধিকার আদায়ের জন্য। এই আন্দোলনের উত্তাপ বিজয় এরাতে পারেনি। সে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেভিওয়েটদের সাথে সেও আন্দোলনে শ্লোগান দিচ্ছে।

সেদিনকার রাতটি ছিল বিভীষিকাময়। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পুলিশ রবার বুলেট, গরম পানি এবং টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে।বিজয় আহত হয়েছে। তার রুমমেট হামিদুর রাহমান তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। বিজয় হামিদকে অনুরোধ করে, সে যেন তার বাবা-মা কে কিছু না বলে। তাদের ছেলের এই অবস্থা শুনে তারা সহ্য করতে পারবে না।

“তুই চিন্তা করিস না দোস্ত। আগে তুই ঠিক হ। তারপর দেখা যাবে”। হামিদ এই কথা বলে তাকে আশ্বস্ত করে।
আহত বিজয় ঢামেকের মেঝেতে শুয়ে আছে।
তার পাশে আরও অনেকেই আহত অবস্থায় পড়ে আছে।

****
খানিকক্ষণ পর সে খেয়াল করে, সে এক একটি রুমে শুয়ে আছে।

আশেপাশের সেই আহত ছাত্রদের আর দেখা যাচ্ছে না।

সে ভাবতে থাকল, তাকে কি কোন অবসারভেসন রুমে নিয়ে আসা হয়েছে?

খুবই খারাপ কিছু হয়নি তো?

টিয়ার গ্যাসের সেল তার মাথায় লেগেছে। অনেক রক্ত ঝরেছে। বুকে এবং পিঠে রবার বুলেট লেগেছে।

বিজয় ভাবতে থাকে।

“তোরা কি করছিস রে”?একটা গম্ভীর এবং ভরাট গলা বলে উঠল।

আধা-আলো এবং আধা ছায়ার মধ্যে বিজয় একটি বিশাল ছায়া আবিষ্কার করল যে পাইপ টেনে, টেনে কথা বলছিল।পাইপের ধোয়াতে পুরো রুম আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ছায়াটি একটি দোদুল্যমান চেয়ারে বসে দুলছে আর কথা বলছে। আলোতে তার মুখ ভেসে উঠার সাথে, সাথে বিজয় আবিষ্কার করল সে আর কেউ নয় বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রাহমান।

বিজয় স্তম্ভিত।

এটা কি করে সম্ভব?

বঙ্গবন্ধু এখানে কি করছেন? আর আমার সাথেই বা কেন কথা বলছেন?

“এই তোরা কি শুরু করেছিস? এই বাংলার মাটিতে আবার রক্তের দাগ কেন রে? তোদেরকে বাংলাদেশ দিয়েছি কি আরও বেশী রক্ত ঝরানোর জন্য? আমার আশে পাশে থাকা চাঁটার দল গুলো এখনও আছে দেখছি”।

বঙ্গবন্ধু চুপ করে গেলেন।

পাইপ টানতে থাকলেন।
বিজয় চুপ।

তার মাথা কাজ করছে না।

বঙ্গবন্ধু আবার গর্জন করে উঠলেন। এবার তার তর্জনী বিজয়ের দিকে।

“এই চাঁটার দল দেশের মানুষ এক হোক চায় না। কোন না কোন কিছু একটা বাঁধিয়ে সবাইকে আলাদা করে রাখবে। তোদের রক্ত ঝরছে।তোদের এই রক্ত নিয়েও চাঁটার দল এই বাংলার মাটিতে রাজনীতি করছে। ওরা কি বুঝে না, নিরীহদের রক্ত নিয়ে রাজনীতির খেলা ভালো কিছু আনে না!তোরা ন্যায়ের পক্ষে লড়ছিস কিন্তু চাঁটার দল সেটা নিয়ে খেলবে, খেলছে। কাদের সাথে চলিস কিংবা কাদের কথায় তোরা নাচিস সেটা তোরা কি ভেবে দেখিস”?  

বিজয় ভয়ে, ভয়ে বলে উঠল, “জি, জি না!”

****  

দূর থেকে বুট জুতার আওয়াজ পাওয়া গেল। দৃশ্য পটে ভেসে উঠল জিয়াউর রাহমান। তার চোখে রেভ্যান সানগ্লাস। পরনে আর্মি পোশাক।

কিরে তুই কোথা থেকে এলি?বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রাহমানকে জিজ্ঞেস করলেন।

Sir, I was in your assignment to control the chaotic regions of Dhaka. The students have gone out of control. We had to intervene to restore peace. Now everything is under control,” জিয়া উত্তর দিলেন।

“হুম, ভালো করেছিস। সফিউল্লাহ কই? ওকে কামের সময় কখনও পাওয়া যায় না,” বঙ্গবন্ধু গম্ভিরভাবে বললেন।তারপর বললেন, “বাংলার মাটিতে আবারও রক্ত জিয়া। এটা মানতে পারছি না। এসব অবুজ তরুন গুলো না বুঝে ঝাপিয়ে পড়ছে। এই সবুজ ঘাসে আমি রক্ত দেখতে চাই না রে”।

জিয়া বিজয়ের পাশে বসলেন এবং বললেন, “দেশকে ভালভবাসো”?

বিজয় বলল, “আমার নিজের জানের চেয়েও বেশী ভালবাসি”।

“গুড। কিন্তু দেশের জন্য কাজ এভাবে করলে হবে না। তোমার শ্রম এবং মেধা দিতে হবে।এবং যেটাই কর সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে করবে। মনে রাখবে, এই দেশের কাছে তুমি ঋণী। এই ঋণ শোধ করার মত নয়। তুমি ভালো কাজ করলেই না দেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সম্মান তোমাদের মত তরুনদের হাতে।কি করছ আর না করছ সেটা ভেবে চিন্তে করবে”।

বঙ্গবন্ধু দাড়িয়ে গেলেন। বলে উঠলেন, “তোদের বুকের আর এক ফোঁটা রক্ত আমি সহ্য করব না। এই চাঁটার দলকে আমি শায়েস্তা করব। আমি বাঙ্গালী, আমি মুসলমান, আমি শেখ মুজিবর রহমান এখনও মরি নাই যে এই বাংলার দামাল ছেলেদের বুক থেকে রক্ত ঝরবে”।  

“আমরা সর্বদা এই দেশের পাশে আছি এবং থাকব। বিশেষ তোমাদের মত তরুন্দের পাশে আমরা আছি। We will fight for the rights and justice of people of Bangladesh till the end. Allah will always be with Bangladesh,” বিজয়কে জিয়া আশ্বস্ত করলেন।

****

বিজয়ের চোখ খুলেছে।
তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
তার পাশে বসে বাবা এবং মা কাঁদছেন।

হামিদ তার বন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করে বিজয়ের বাবা-মাকে খবর দিয়েছে।

মা আবেগি হয়ে বিজয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

কিন্তু বিজয়ের মাথায় গত রাতের সেই স্বপ্নের কথোপকথন গুলো ঘুরে বেরাচ্ছে।

সে কেন ঐ সপ্ন দেখল?

ওটা কি কোন নির্দেশনা নাকি নিছক একটা স্বপ্ন।

ঢামেকের ওয়ার্ডে শুয়েই সে শ্লোগান শুনছে।

শ্লোগান মুখর ঢাকা।

কিন্তু এই শ্লোগান কি শুধুই অধিকার আদায়ের শ্লোগান নাকি অন্য কিছু?

চাঁটার দল কথাটি বিজয়ের কানে কে যেন বলে গেলো।

পাশেড় টেবিলে দেখল একটি পাইপ এবং রেভ্যান সানগ্লাস পড়ে আছে।  
    
নোটঃ এটা একটি ফিক্সন।  

ধন্যবাদ 
ফয়সাল সিজার                             

No comments:

Post a Comment