ঘটনা ১
বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলটি বল করার আগে দক্ষিন আফ্রিকান অধিনায়ক তামিমের জন্য একটি ওয়াইড স্লিপ রাখে যে কিনা উইকেটকিপার থেকে দূরে অবস্থান করছিলো। প্ল্যান হলো মিডল-এবং-লেগ স্ট্যাম্পের ওপরে একটু উইধ দিয়ে শর্ট বল করা এবং তামিম যেন সেটিকে অ্যাটাক করে এবং বলটি উড়ে যেয়ে ঐ ওয়াইড স্লিপ ফিল্ডারের হাতে যেয়ে পড়ে।
প্ল্যান মতো চতুর্থ বলটি অ্যাবোট ঐ লাইন এবং লেন্থেই
করে কিন্তু তামিম স্লাশ করেও বেঁচে যায় কারন বলটি ঐ ওয়াইড স্লিপের কিছুটা ওপর দিয়ে
চলে যায়। প্ল্যানটা অল্পের জন্য সফল না হলেও ওরা তামিমকে আক্রমনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা
থেকে বিরত থাকেনি। পঞ্চম বলটি প্ল্যান করেই লেগ সাইডে শর্ট-অফ-লেন্থ থেকে বডিকে
টার্গেট করে করা হয়। তামিম পোক করতে যেয়ে ও বিফল হয়। পরের বলটি ঐ একই লেন্থ এবং
লাইনে করা হয় যেন তামিম আক্রমন করে। কিন্তু তামিম আক্রমন করা থেকে বিরত থাকে এবং
সেটি ওয়াইড হয়। এক্সট্রা বলটি আবারও
ঐ একই ভাবে করা হয় কিন্তু এবার তামিম দক্ষিন আফ্রিকার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে – ক্যাসুয়াল ভাবে লেগ সাইডে পুল করতে যেয়ে কট
বিহাইন্ড হয়। বলটি ছেড়ে দিলেই হতো।
ঘটনা ২
দ্বিতীয় ওভারে ক্যাগিসো রাবাদা সৌম্য সরকারের বিরুদ্ধে করা প্রথম পাঁচটি বলের সবকটিই লেন্থে ফেলে। সৌম্যের আক্রমণাত্মক মানসিকতাটা দক্ষিন আফ্রিকানরা ভালোভাবেই স্টাডি করেছে আর তাই তো ওরা জানে যে সৌম্যকে লেন্থ বল দিয়ে সাফোকেট করলে ও আক্রমনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে এবং সেজন্য ষষ্ঠ বলটি করা হলো বাম কাঁধ টার্গেট করে শর্ট-অফ-লেন্থ থেকে। সৌম্য কোন কিছু না ভেবেই, নিজেকে ব্যাকফুটে ভালোভাবে পজিশন না করেই পুল শট খেলতে যায় এবং সে দক্ষিন আফ্রিকার আরও একটি ফাঁদে পা দিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসে। সৌম্য নিজের আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ন্ত্রন না করলে অনেক ভুগবে।
ঘটনা ৩
সাকিব এবং মুসফিক খুব ভালো একটি পার্টনারশিপ গড়ে তোলে। দক্ষিন আফ্রিকা মরিয়া হয়ে ওঠে সেটিকে ভাঙ্গার জন্য। ওরা টার্গেট করে মুসফিক কে। মিড উইকেট এবং ডিপ মিড উইকেট হলো মুসফিকের প্রিয় জায়গা এবং প্রতি ওভারেই একটি কি দুটি বল মুসফিক ঐ দুটি জায়গা টার্গেট করে বিগ শট খেলে। এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে, অষ্টম ওভারে ডুমিনি খুবই টাইডি একটি ওভার করে যেখানে সাকিব-এবং-মুসফিক আক্রমন করতেই পারছিলো না। মুসফিক আক্রমনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং সেটা জেনেই ঐ ডিপ মিড উইকেটে মিলারকে বসিয়ে রাখা হয় কারন এবার মুসফিক ঐ দিকেই শট খেলবে এবনহ সে সেটাই করে।
পঞ্চম বলে সে উচ্চাবিলাসী হয়ে খুব আর্লি ক্রিজ
থেকে বের হয়ে আসে এবং ওটা দেখেই ডুমিনি লাইন চেঞ্জ করে মিড-এবং-লেগ ষ্ট্যাম্পে বল
ফেলে। মুসফিক বলটি উড়িয়ে মারে ডিপ মিড উইকেটে এবং আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত
যায়।
খুব ভালো একটি পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাবার পর
বাংলাদেশ আর রিকভার করে পারেনি।
ওপরের ঘটনা গুলো থেকে বোঝা যায় দক্ষিন আফ্রিকা কি
ধরনের প্রফেশনাল এবং স্টুডিয়াস একটি দল। তারা কিভাবে বিপক্ষ দলের প্রতিটি
খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতা নিয়ে স্টাডি করে সেটা আজকের খেলা দেখে আবারও
বোঝা গেল।
দক্ষিন আফ্রিকাকে চোকার ট্যাগ দেওয়া হলেও ক্রিকেটে
মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে ওরা অস্ট্রেলিয়ার মতোই দুর্দান্ত। হ্যান্সি ক্রনিয়ের সময়
দেখেছি, দেখেছি গ্রায়েম স্মিথের সময় এখন এবি-ডু-প্লেসিস যুগেও দেখছি।
অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিন আফ্রিকার মতো দলের
বিপক্ষে খেলতে হলে ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে এবং এটা নিয়ে
পড়তে হবে। না পড়লে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটা ভালোভাবে শেখা যায় না।
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার
No comments:
Post a Comment