Thursday, November 16, 2017

ইডেন গার্ডেনের সবুজ উইকেট এবং কিছু কথা


আগামী বছরের শুরুতেই ভারত দক্ষিন আফ্রিকা সফরে যাবে ওখানকার উইকেট পেস বোলারদের সহায়ক হবে ভেবে ভারত নিজের দেশে সেরকম উইকেট তৈরি করেছে যেন দক্ষিন আফ্রিকার জন্য প্রস্তুতিটা এই সিরিজেই হয়ে যায় ভারতের এরকম চিন্তাকে স্বাগত জানাতেই হয় এই তো ২০১৩ সালেও দক্ষিন আফ্রিকা সফরের পূর্বে ভারতের এরকম প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি ভারতের মাটিতে সুইং এবং সিম ফ্রেন্ডলি উইকেট? এটা ভাবাটা এক রকম বোকামি ছিল কিন্তু কালের প্রবাহে ভারতের সর্বত্র উন্নতির সাথে, সাথে ক্রিকেট কালচারে একটা আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে এবং সেটি হলো একঘেয়েমি হোম কন্ডিশনের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টা

একটি দেশের ক্রিকেট কালচার বলুন কিংবা অর্থনীতি আর রাজনীতির কালচারই বলুন, সেখানে যখন সস্তা আবেগ এবং তৈল মর্দনকারীদের অতিমাত্রায় প্রশ্রয় না দিয়ে প্রাকটিক্যাল চিন্তধারার উপর জোর বেশী দেওয়া তখন স্বভাবতই সেই দেশে শিক্ষিত এবং ভিসিওনারী জনগোষ্ঠীরদের উদয় বেশী হবে এবং তাদেরকে সেরকম গুরুত্ব বেশী দেওয়া হয় এবং এই কোয়ালিটি জনগোষ্ঠীই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় কারন এই জনগোষ্ঠী তেল মারা কিংবা শোআপ নয় বরং অর্থবহ কাজের উপর গুরুত্ব বেশী দেয়

***

আচ্ছা মনে করুন, আগামী বছর বাংলাদেশ দক্ষিন আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে এখন যাবার পূর্বে দেশীয় সিরিজ জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ কি এরকম দুর্বল টেস্ট দলের সাথে পেস বোলারদের সহায়ক উইকেট বানাতে সাহস করবে? ওটা করা তো দূরের কথা, উল্টো হয়ত দেখা যাবে জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ আয়োজনের জন্য নাজমুল হাসানের বাপ-দাদার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করা হচ্ছে কিংবা সিরিজ হলেও পেস বলিং সহায়ক উইকেট বানানোর জন্য বিসিবিকেহোম কন্ডিশনঅবহেলার বরাত দিয়ে আবারও গুষ্ঠি উদ্ধার করা হবে এরকমটি হবে কারন আমাদের ক্রিকেট কালচার ব্যক্তি পূজা এবং অযোগ্যদের দখলে শুধু ক্রিকেট নয় এই দেশের অনেক কিছুই এরকম পাবলিকদের জয়জয়কার উদাহরনঃ মন্ত্রী পলক, মেয়র আনিসুল হক ইত্যাদি ইত্যাদি

***
ভারতে আমার বন্ধু এবং বান্ধবী দুটোই আছে ক্রিকেটের সূত্র ধরে এদের সাথে অনেক কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমি এখনও এদের সাথেই কাজ করছি যতই ভারতীয়দের সাথে কাজ করছি ততই তাদের কাজের ইথিকাল দিক গুলো এবং জ্ঞানের গভীরতা দেখে, আমার বন্ধু এবং বান্ধবীদের উপর শ্রদ্ধা দিনের পর দিনে বেড়েই যাচ্ছে

এই যেমন, আমারই একজন পরিচিত কর্পোরেট, ক্রিকেট নিয়ে বই লিখেছেন এখন সে তার লিংক গুলোকে ব্যবহার করে অনেক নামিদামী লোক জড়ো করে তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠান করবেন বইয়ের রিভিউয়ের ব্যাপারে তারই ক্রিকেট লেখক বন্ধুদের তিনি রিকোয়েস্ট করেছেন আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, তার বন্ধুরা বইটির ব্যাপারে কোন ভালো রিভিউ দেয়নি কারন এসব ক্রিকেট লেখকদের মনে হয়েছে, তার বন্ধুর বইয়ে অনেক ফাঁকফোকর আছে এবং একটা এভারেজ জিনিসকে তারা প্রমোট করতে চায়নি কারন এটাতে তাদের ক্রিকেট কালচারের ক্ষতি হবে

এই ব্যাপারটি বাংলাদেশে কল্পনা করা অসম্ভব কোন অনুষ্ঠানে মাশরাফি এসে যদি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে তাহলে সেই বই যতই বাজে হোক, সেটাকে জোর করে হলেও হিট করাতেই হবে কারন কালচার গরে উঠুক আর নাই উঠুক ব্যক্তি পূজা করা বেশী দরকার এবং লেখক যদি কোন কর্পোরেট জগতের হেভিওয়েট হন তাহলে তো কথাই নেই যাতা জিনিস প্রমোটেড হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশে এরকম অহরহ হচ্ছে আর তাই আমরা একটা জায়গায় এসে থেমে আছি

***

আমি লক্ষ্য করেছি, একজন ভারতীয় সহজেই তাদের একটি চিন্তাকে অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত করতে দেয় না আপনি কিছু বললে তারা সেটা নিয়ে স্টাডি করবে এবং পরবর্তীতে যদি দেখে আপনার মতামত যুক্তিসংগত, তাহলে সে আপনাকে ধন্যবাদ বলে সহায়তা করার হাত বাড়িয়ে দেবে এটাই পরিণত কালচার একটি পরিণত কালচারই দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং কেই কংগ্রেস হোক আর বিজেপি হোক, এই পরিণত কালচারের লেগেসি সবাই ভালোভাবে মেইনটেন করছে


ভারতের উন্নতি কোন ম্যাজিক নয় বরং তারা বেসিক ব্যাপার গুলোর উপর গুরুত্ব দিয়েছে যেটা এত বছরেও আমরা দিতে শিখিনি একজন ভারতীয় দেশপ্রেমী এবং একজন বাংলাদেশী দেশপ্রেমিক কিন্তু ভারত বাংলাদেশীদের মত অন্ধ দেশপ্রেমিক না যে, ব্যক্তি পূজা এবং দলকানার খাতিরে সব ভুল হজম করে নিবেন   

ধন্যবাদ 
ফয়সাল সিজার                         

No comments:

Post a Comment