এই বছরের মে মাসের দিকের ঘটনা। মেডিসিন বিভাগ থেকে একটা রেফারেল আসলো
আমাদের ইউনিটে। আমার ইউনিট প্রধান এবং সহকারি রেসিডেন্ট ক্যাথল্যাবে থাকায় আমি ঐ
রেফারেলটা ডিল করি। যে লোক রেফারেল নিয়ে এসেছিল সে ছিল রোগীর ছেলে। উনি আমাকে
ক্রমাগত বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন আমি সেগুলোর উত্তর দিতে থাকলাম এবং
তার বাবার কি লাগবে আর না লাগবে সেগুলো বুঝিয়ে বলতে থাকলাম। আমার সাথে কথা বলে উনি
বেশ স্যাটিসফাইড হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি ঢাকা
মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন?” আমি উত্তর দিলাম, “আমি বাংলাদেশ
মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছি”।
আমার উত্তর শুনে লোকটির মুখের হাসি মিলিয়ে গেল এবং কিছুক্ষন আমার
দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “ও, আমি তো ভেবেছিলাম......ঠিক আছে আমি
আসি।” আমি
বলেছিলাম, “কেন বাংলাদেশ মেডিকেল নামটা পছন্দ হয়নি বুঝি?” উনি কোন উত্তর
না দিয়ে চলে গেলেন।
আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। এরকম মন খারাপ অনেকবারই হয়েছে। তবে
এগুলো হজম করে ফেলি।
উনার রিএকশন দেখে বুঝেই ফেলেছিলাম যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং
সেখান থেকে পাশ করা ডাক্তারদের ব্যাপারে উনার ধারনা ভালো নয়। আর এই ধারনারটা তৈরির
পেছনে আমাদের দেশেরই কিছু লোককে অবশ্যই দায়ী করা যায় যারা কোন কিছু না জেনে,
না
বুঝে বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাশ করা ডাক্তারদের খুবই খাটো করে দেখে। কেউ, কেউ অবশ্য জেনে
বুজেই করে।
দেখুন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একজন ছেলে কিংবা মেয়ে টাকা দিয়ে ভর্তি
হয় ঠিকই কিন্তু যত টাকাই খরচ করুক না কেন, সেই ছেলে কিংবা মেয়ে
যদি পরিশ্রমী কিংবা পড়ুয়া না হয় তাহলে সে কোন ভাবেই ভালো ডাক্তার তো দূরের কথা,
পোস্টগ্রাজুয়েশনের
বাঁধাই পাড় করতে পারবে না।
নিজেদের চোখে পড়ে থাকা কালো চশমাটা খুলে একটু দেখুন,
বেসরকারি
মেডিকেল থেকেও এফসিপিএস, এমডি, এমএস, এমআরসিপি,
এএমসি
কিংবা ইউএসএমইলি পাশ করা ছেলেমেয়েরা বের হচ্ছে। বেসরকারি মেডিকেল থেকেও বিসিএস পাশ
করে সরকারী চাকরি করছে অনেকেই। বেসরকারি মেডিকেলে পড়লেই যে সে কিছুই পারে না কিংবা
কিছুই করতে পারবে না এই ধারনার বশবর্তী হয়ে থাকলে আপনি নিঃসন্দেহে ভুল করছেন।
দেখুন, আমি বেসরকারি মেডিকেলের ছাত্র এবং আমি যেসব পরিস্থিতির মোকাবেলা
করেছি এবং করি সেগুলো খুবই ডিসকারেজিং। আমাকে প্রথমেই বাদের খাতায় ফেলা হয়েছে
বহুবার এবং সেখান থেকে নিজেকে আস্তে, আস্তে প্রমান করে আসতে হয়েছে। আমার মতো
অনেকেই আছেন যারা অনেক ডিসকারেজিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হন কিংবা হয়েছেন।
ক্লিনিক্যাল সাইডে বেসরকারি মেডিকেল সরকারি মেডিকেলের চেয়ে কিছুটা
হলেও পিছিয়ে আছে। কিন্তু তারপরও বেসরকারি মেডিকেলের পাশ করা ডাক্তারেরা কিন্তু
থেমে নেই।
তারা বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ট্রেনিং এবং বিসিএস করে ট্রেনিং পোস্টে
এসে অনেক কিছুই শিখছে এবং বেশ ভালো করছে। এদের কষ্টের পরিমানটা ও বেশী হয়। কারন
অনেক ক্ষেত্রেই এদের মোরাল সাপোর্ট সেরকম থাকে না যেটা একজন সরকারি মেডিকেল থেকে
পাশ করা ডাক্তারদের থাকে।
সম্প্রতি বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ন্যূনতম পাশ মার্ক বলে ১০০-তে ২০
নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি এই নিয়মের পক্ষে না। কারন ১০০-তে ২০ পাওয়া একটি ছেলে
কিংবা মেয়ের মেডিকেল পড়ার যোগ্যতাই থাকতে পারে না। এমনিতেই বেসরকারি মেডিকেল থেকে
পাশ করা একজন ডাক্তার ব্যাকফুটে থাকে, তার ওপর এই আজগুবি নিয়ম তো এদের ইমেজ
আরও খারাপ করবে।
আচ্ছা যারা বেসরকারি মেডিকেলে ভবিষ্যতে পড়বে তাদের সবাই কি ২০ পেয়ে
ভর্তি হবে? এরকমটি তো হবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর
মেডিকেল কলেজ, বারডেম মেডিকেল কলেজ, হলি ফ্যামিলি কিংবা ন্যাশনাল মেডিকেল
কলেজে অনেক ভালো-ভালো ছেলেমেয়েরা ও ভর্তি হবে। এখন এই ২০-মার্ক-নামক-জোক দিয়ে কি
তাদেরকে বিচার করা ঠিক হবে? অবশ্যই ঠিক হবে না।
নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু পরিবর্তন করুন। মানুষকে উৎসাহ দিতে
শিখুন।
ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার
No comments:
Post a Comment