Wednesday, September 2, 2015

ঢাকার জলাবদ্ধতাঃ অনেকাংশে আমার ও দায়ী!




গতকাল বাবার ক্যান্সারের রিপোর্ট হাতে নিয়ে অনেকটা নিস্তব্ধ অবস্থায় বাসায় ফেরার পথে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বর ক্রস করেই সিনএনজি ড্রাইভার আটকে যায় গতকাল ধানমণ্ডি এবং মিরপুর রোডের অনেকটা অংশ জুড়েই ছিলো জলাবদ্ধতা আমি নিজ থেকেই সিনএনজি থেকে নেমে যাই এবং ধানমণ্ডির ভেতর দিয়ে হেঁটে লালমাটিয়ার গলির ভিতর ঢুকে যাই উদ্দেশ্য ছিলো শ্যামলী পর্যন্ত যাওয়া একবার শ্যামলী পৌছাতে পারলেই বাসায় ফেরাটা সহজ হয়ে যাবে

কিন্তু লালমাটিয়ার ভেতরে ঢুকে আমি একদম আটকে যাই

একজন রিক্সাচালক কে জিজ্ঞেস করলাম শ্যামলী যাবে কিনা সে বলল ১০০ টাকার নীচে সে যাবে না মাই ১০০ টাকাতেই রাজি হয়ে যাই কিন্তু রিক্সাচালক আমাকে লালমাটিয়া থেকে বের করতে পারলো না কোন পথ দিয়ে বের না হতে পেরে সে আমাকে বলল, “মামা, ভাড়া লাগবো না আপনি হাঁটা দেন না হইলে সাঁতারইয়া বাড়ি জান আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম এবং লালমাটিয়া এলাকার ভেতর ঘুরে, ঘুরে বেরোবার পথ খুজতে থাকলাম বিশ্বাস করুন, লালমাটিয়া থেকে বেরোবার সব পয়েন্ট গুলোতে পানি জমে ছিলো কিভাবে বের হবো?

আমি হাটতে, হাটতে ক্লান্ত হয়ে একটি জায়গায় এসে আইল্যান্ডের ওপর দাড়িয়ে ছিলাম সামনে জলরাশি জুতা-মোজা খুলে নেমে পড়ার প্ল্যান করছিলাম ঠিক এমন সময় একটু দূরে একটি নীল পিকাপ-ভ্যান নজরে আসলো ভ্যানটি জামে আটকে ছিলো মনে করলাম এটা পুলিশের গাড়ি একটু কাছে গিয়ে দেখি সেটি Bangladesh Navy-এর Coastguard-এর পিকাপ-ভ্যান আমার মনে হলো, এই জলরাশি থেকে বের হবার জন্য উনাদের কাছে লিফট চাইবো কিনা! আবার মনে হলো, একটু বেশী জোকারি হয়ে যাবে না তো? শেষ পর্যন্ত সাহস করে ন্যাভাল ভাইয়ের কাছে লিফট চেয়েই বসলাম আমি কাছে গিয়ে বললাম, “ভাই, আমাকে একটু শুকনো জায়গা পর্যন্ত কি নামানো সম্ভব হবে”? পুলিশ ভাই একটিবারও চিন্তা না করে আমাকে পেছনে উঠে বস্তে বললেন এবং সেই বিশাল জলরাশি পাড় করে আমাকে পানিবিহীন রাস্তায় নামিয়ে দিলেন

আমি গাড়ি থেকে নেমেই তাকে ধন্যবাদ দিলাম এবং উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “বাসা কোথায়”? আমি বললাম, “মিরপুর- উনি বললেন, “সরি, আমি আগারগাও যাবো তা না হলে বাসাতে নামিয়ে দিতাম

তাড়াহুরোর মধ্যে উনার নাম জানা হয়নি কিংবা সেরকম ভাবে পরিচিত হতে পারিনি বিপদের সময় এখনও মানুষ, মানুষকে সাহায্য করে আর সেটা যদি কোন আর্মি পারসনের কাছ থেকে হয় তাহলে ভাবতে আরও ভালো লাগে যেভাবে নেগেটিভ প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয় আমাদের আর্মি সম্পর্কে তাতে তো এদের কাছ থেকে কিছু আশা করাটা ঠিক না

পিকাপ-ভ্যানে চড়ে লালমাটিয়ার ভেতর দিয়ে আসার সময় কিছু লোকাল সেচ্ছাসেবক দল, যারা পাড়ারই ছেলে, নজরে আসলো যারা নিজের উদ্যোগে লালমাটিয়ার ভেতরের জ্যামকে সামাল দিচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশের মতো এবং আর একটি দলকে দেখলাম জলাবদ্ধতারা কারনে সৃষ্ট ময়লা পরিষ্কার করছেন আমি তাদেরকে গাড়ি থেকেই বললাম, “ভাই, আপনাদেরকে স্যালুট

মোবাইলের চার্জ ছিলো না আর তাই এদের ছবি গুলো তোলা হয়নি কারন সবার নজরে শুধু ঢাকার নেগেটিভ সাইড গুলোই আসে পজেটিভ ব্যাপার গুলো আসে না

ঢাকার বুকে এখনও ভালো মানুষ আছে!

দেখুন ভাই, আপনি নিজে যদি কিছুই না করতে পারেন তাহলে অন্যের সমালোচনা করবেন না এবং ফেসবুকে বসে, বসে হতাশার বানী শোনাবেন না প্রধানমন্ত্রী কিংবা ঢাকার মেয়রদের গোষ্ঠী উদ্ধার করাটা খুবই সহজ আচ্ছা বলুন তো, ঢাকার এই অবস্থার জন্য কি আমি এবং আপনি দায়ী নই? আমরা নিজেরা এই ঢাকার সাথে কেমন আচরন করি? সব দোষই কি মেয়র কিংবা প্রধানমন্ত্রীর?
মুখে তুলে না খাইয়ে দিলে এই জাতির ভালো লাগে না আর তাই, আপনাদের মুখে বড়, বড় কথাও মানায় না সব কিছুই প্রধানমন্ত্রী এবং মেয়র করে দিলে তুমি কি করবা? পায়ের ওপর পা তুলে টকশোতে বসে, বসে খালি চিল্লাবা? নাকি ফেসবুকে বসে, বসে আবেগি পোস্ট দিয়ে সেলেব্রিটি হবা?

টকশো কিংবা ফেসবুক সেলেব্রিটিদের মতো চিন্তা করাটা বাদ দিন ভাই ঠাণ্ডা মাথায় নিজে চিন্তা করেন ঢাকার এই করুন দশার জন্য অনেকাংশে  আমরাও দায়ী
 
ধন্যবাদ 
ফয়সাল সিজার 

No comments:

Post a Comment