Friday, September 11, 2015

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভঃ খেয়াল রেখো, তোমাদেরকে কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে




বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সবাই কোটিপতি বাবার ছেলেমেয়ে না। আমি একটি বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাশ করা ছেলে। আমার বাবা কোটিপতি ছিলেন না। সরকারি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবার ঠিক দুই সপ্তাহ আগে আমার চিকেন পক্স এবং জণ্ডিস একসাথে হয়েছিলো। পক্সের তীব্রতা একটু কমে যাবার পর খুবই অসুস্থ শরীর নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু চান্স পাই নাই। ঢাকা ভার্সিটিতে '' ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক তিনদিন পূর্বে আমার সোলডার ডিসলোকেসন হয়েছিলো। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্নটা ও শেষ হয়ে যায়। ইয়ার লস হবে দেখে আমার মা আমাকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান।

আমার ব্যাচে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ১১৫ জনের মতো। অবশ্যই আমাদের ব্যাচে উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা ও ছিলো, কিন্তু ১১৫ জনের মধ্যে সবাই উচ্চবিত্ত ঘর থেকে উঠে আসেনি । প্রায় ৭০ থেকে ৮০-ভাগ ছাত্রছাত্রীই আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাক গ্রাউন্ড।  

কিন্তু এই দেশের একটি  গোষ্ঠী  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  এবং মেডিকেল কলেজ গুলোর ব্যাপারে খুবই বাজে ধারনা পোষণ করে থাকেন।  এদের মতে,  যেসব ছাত্রছাত্রী বেসরকারি মেডিকেল কিংবা  বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে পাশ করে  তারা সবাই কোটিপিত বাপের ছেলেমেয়ে এবং এদের কোন যোগ্যতাই নেই।  আজব মানুষজন! কোটিপতি লোকজন কি বাংলাদেশের গাছে, গাছে ঝুলে নাকি? আর যোগ্যতা নেই মানে? এসব বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা জীবনে কতটা সাফল্য অর্জন করছে সেটা কি আপনারা জানেন? যারা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে তারা আর যাই হোক বড় মনের মানুষ নন। তাদের মানসিকতা খুবই ছোট।  

একটি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে কিংবা মেয়ে যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তখন  তাদের পড়ার খরচ যোগাতে বাবা মায়ের কতটা কষ্ট হয় সেটা কি ৭.৫% ভ্যাট নির্ধারকগন বুঝতে পারেন? কোন নিয়ম ঘোষণা করারা আগে একটু চিন্তা ভাবনা করা কি উচিৎ নয়? সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করে দেখান তো? সেই সাহসটা কি আছে আপনাদের?  

আমি আমার পরিবারকে দেখেছি কতটা কষ্ট করে আমার এবং আমার বোনের পড়ার খরচ যোগাতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সবাই উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়ে না সেটার আরও একটি প্রমান হলো, রাস্তায় নামা বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রী  গুলোর ইস্পাত কঠিন মুখ গুলো। একটি কথা মনে রাখবেন, বিপ্লব গুলো মধ্যবিত্ত ঘর থেকেই আসে, বিত্তবানেরা বিপ্লব করতে পারে না। যুগে, যুগে অধিকার আদায়ের  আন্দোলন ঐ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সমাজের লোকরাই করেছে।  

অন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ করতে বাঁধা নেই কিন্তু মনে তখনই খটকা লাগে যখন দেখি আন্দোলনের বেগটা কেমন যেন অদ্ভুত। মানে, খটকাটা এরকম যে, পেছন থেকে কোন তৃতীয় পক্ষ একটি সৎ উদ্দেশ্যকে টুইস্ট করে আরও বেশী বেগ দিয়ে সেটাকে ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করছে না তো? বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রছত্রীরা কোন অরাজগতা করবে না কারন তারা যে পরিবেশে পড়ালেখা করে সেখানে রাজনীতির কোন স্পর্শ নেই।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতি করে না। কোন আন্দোলন কিভাবে করবে সেটার অভিজ্ঞতা ও তাদের নেই। তাদের এই আন্দোলন যেন খারাপ দিকে না যায় সেটা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীকেই খেয়াল করতে হবে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলে ভালো হবে। আমি মনে করি, উনি তোমাদের কথা শুনবেন।

খেয়াল রেখো, তোমাদেরকে কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে।

ধন্যবাদ
ফয়সাল সিজার

No comments:

Post a Comment