Sunday, May 29, 2016

Sportpulse - যেখানে আমার অনেক মধুর স্মৃতি আছে




২০১০ সালের কথা। আমি পুরো দস্তুর বেকার এবং হতাশাগ্রস্থ। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগে অনারারী ট্রেনিং করতাম কিন্তু কাজ করতে ভালো লাগতো না। এই মেডিকেল লাইনটা ভালোই লাগছিলো না। বারংবার বাঁশ খেতে, খেতে জীবনটা বাঁশময় হয়ে গিয়েছিলো। মেডিকেলের বই এবং কাজ দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যেত। চাকরি নাই, কোর্স নাই, এত কামলাগিরি করে কি হবে?

কোন প্রফেশনটা খুব সিরিয়াসলি নেওয়া যায় সেটা দিনরাত খুব ভাবতাম কারন এই মেডিকেল লাইন একদম ছেড়ে দেবো বলে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। আর যদি থাকতেই হয় তাহলে ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকবো না। বেসিক সাইন্সে ক্যারিয়ার করে স্পোর্টস লাইনএ বেশী মনযোগ দেবো।

ডেইলি স্টার এবং অবসারভারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ওখানে স্পোর্টস রিপোর্টার পোস্টে এপ্লাই করতে কি, কি যোগ্যতা লাগে। আমাকে একটা মিউজিক বাজিয়ে ওয়েট করিয়ে রাখলো পর,পর দুইদিন। মেজাজ খারাপ করে আর সরাসরি যাইনি। একটু লাইনঘাট খোঁজার চেষ্টা করতে থাকলাম। আমি আরও কয়েক জায়গায় নক করলাম স্পোর্টস রিপোর্টার হবার জন্য। কেউ পাত্তা দিলো না।

ঠিক আগস্ট মাসের দিকে সাজ রাজপুত নামে একজন ফেসবুকে মেসেজ দিলো, ক্রিকেটের ওপর আমার কিছু ব্লগ এবং ফেসবুক পোস্ট দেখে একটি নতুন ওয়েবসাইট আমাকে রিক্রুট করতে চায়। আমি একদম রাজী। আমাকে Abdul Muqeet নামে ১৬ কি ১৭ বছরের এক ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হলো। সে এবং তাঁর Abdul Moiz বড় ভাই, যার বয়স ১৯ কি ২০ হবে বলে ঐ ওয়েবসাইটের মালিক। আমি ভাবলাম, এই চ্যাংড়া ছেলের বস মানতে হবে? কিন্তু নিজেকে মেলে ধরার কথা ভেবে আমি আর কিছু ভাবলাম না। ওর সাথে যোগাযোগ করে নিজের প্রথম লেখা দিলাম। লেখাটি আশরাফুলকে নিয়ে।

মুকিতের টার্গেট ছিলো গুগলকে চ্যালেঞ্জ করে একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করা যার নাম Pksearch. সেই নামেই তারা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। এত ছোট বয়সে এরকম চিন্তা দেখে আমি বেশ বিস্মিত এবং একই সাথে মুগ্ধ ও হয়েছিলাম।

এর মধ্যে আমি Aziz Ul Qadir কে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমি আজিজকে অনেক জোরাজুরি করতে থাকি লেখার জন্য কারন সে তাঁর ভার্সিটি লাইফে কবিতা এবং লেখক হিসেবে মেডেল জিতেছিল এবং তাঁর ক্রিকেট জ্ঞান খুবই প্রখর। আজিজ প্রথমে রাজী না হলেও পরে রাজী হয়েছিলো এবং পরবর্তীতে সে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলো তাকে লেখালিখিতে ফিরিয়ে আনার জন্য। ওদিকে বাংলাদেশ থেকে আমি জিকোকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম ক্রিকেট পরিসংখ্যানের ওপর ওর দক্ষতা দেখে। জিকো অবশ্য পড়ে কন্টিনিউ করেনি। এরই মধ্যে যোগ দেয় অস্ট্রেলিয়ান-কানাডিয়ান কেরিন খান।

আমাদের সর্বমোট সদস্য সংখ্যা ছিলো ছয়জন। আমি, জিকো এবং আজিজ ক্রিকেট সেক্টর দেখতাম এবং ওদিকে ওয়াকার আহমেদ দেখত ফুটবলের ব্যাপার। কেরিনের পোস্ট গুলো ছিলো ক্রিকেট এবং রান্নাবান্নার মাসালাদার লেখা। আমি এদেরকে অনেক অত্যাচার করতাম। সব ব্যাপারে আপডেট দিতাম এবং নিয়মিত পোস্ট চালু রাখতে বলতাম যেনো ভিসিটর না কমে যায়। কারন আমি থাকলে কাজ সিরিয়াসলি করতে হবে। কোন আলসেমি চলবে না।

Pksearch ওয়েবসাইটের নাম লোকাল ব্যাপারে বেশী অ্যাপিল করে আর তাই আমি মুকিত এবং মইজকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম, এটাকে গ্লোবাল অ্যাপিল দিতে হলে লোকাল জিংগোইসমকে কবর দিতে হবে। অনেক তর্ক, কথা এবং ঝগড়ার পর একটি ভোট হয়েছিলো নভেম্বরের ২০১০-এর দিকে। আজিজের সুপারিশকৃত Sportpulse স্বীকৃত হয় ওয়েবসাইটের নতুন নাম হিসেবে। ২২শে নভেম্বর ২০১০-এ অফিশিয়ালি SportPulse.net এর যাত্রা শুরু হয়।

আমি, আজিজ এবং কেরিন পাগলের মতো কাজ করতাম। নিজেকে একজন স্পোর্টস রিপোর্টার এবং লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটা নেশা আমার মধ্যে পেয়ে বসেছিলো। ২০১১ সালে বিএসএমএমইউ-তে চাকরি হবার পর আমার বেকার জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং আমি ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকার জন্য আবার নিজেই নিজেকে আরও একবার সুযোগ দেই। কিন্তু Sportpulse-এর কাজ থেমে থাকেনি।
Sportpulse-এ আমার অনেক মধুর এবং তিক্ত স্মৃতি আছে। মধুর স্মৃতি গুলোর পরিমাণই বেশী। সিধুকে নিয়ে লেখা আমার রিপোর্ট, ইমারান খানকে নিয়ে লেখা আর্টিকেলের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লেখা গুলোর ভূয়সী প্রশংসা এবং গুগোল নিউজে তপে থাকা, পিসিবির কঠোর সমালোচনা করে লেখার ওপর মিশ্র প্রতিক্রিয়া, ক্রিস গেইলকে করা আমার রিপোর্ট নিয়ে গেইল নিজেই তার টুইটার একাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ, ২০১১ সালে সেরা ব্লগ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি ইত্যাদি আরও অনেক মধুর স্মৃতি আছে।

MBBL International নামক গ্রুপ এখন Sportpulse কিনে নিচ্ছে। গত ২২ মে, ২০১৬-তে আমাদের সেই Sportpulse-টি আর নেই। এটি এখন একটি বিরাট কোম্পানির মালিকাধিন হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বড় হবে এই আশাই রাখি। 

এই ওয়েবসাইটটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেদিন ওরা আমাকে সুযোগ না দিলে, আমি নিজেকে একজন ক্রিকেট লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতামই না। আমি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এদের সাথে কাজ করেছি। সেই ছয়জন সদস্য থেকে প্রায় ৩০০-এর ওপর লেখকের কন্ট্রিবিউশন সম্পন্ন একটি ওয়েবসাইট আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ব্যাপারটি মুকিত, মইজ, আমার, আজিজ এবং কেরিনের জন্য গর্বের ব্যাপার। আমাদের শ্রম এবং মেধা এখানে জড়িয়ে আছে।

আমি আজ খুবই স্মৃতিকাতর। ছয়জন থেকে ৩০০-জনের একটি ওয়েবসাইট! কত রকমের লেখক এবং লেখিকার সাথে কথা হয়েছে, তর্ক হয়েছে, শেখাতে হয়েছে, কোন ইভেন্ট নিয়ে প্ল্যানিং করতে হয়েছে, পুরো টিমকে গাইড দিতে হয়েছে যাদের মধ্যে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া ইত্যাদি দেশের কন্ট্রিবিউটার-রা ছিলেন। এদেরকে বকা দিয়েছি এবং আদরও করেছি।

মনের মণিকোঠায় আজ অনেক স্মৃতির সমাবেশ।

পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, অনেক বাঁধা বিপত্তির পরও গঠনমূলক কাজ ভালোই করেছি।

ধন্যবাদ 
ফয়সাল সিজার 

No comments:

Post a Comment